Header Ads

Reply 1988 | Korean Web Series Bangla Review | রিপ্লে ১৯৮৮ কোরিয়ান ওয়েব সিরিজ রিভিউ বাংলা

 


"তারুণ্য"
তারুণ্যকে কী বিদায় জানাতেই হয়?
বেঁধে রাখা যায়না লাল ফিতায়, যে ফিতায় আমার চুলের বিনুনি উঠতো,বেঁধে রাখা যায় না সে ধোঁয়ায় যে ধোঁয়ায় শীতরাতে তনুতে উত্তাপ উড়তো, বেঁধে রাখা যায় না সে সময় যে সময় বড়ো বোনের জামাগুলোর প্রতি অধীর আগ্রহ ছিলো??
কেনো যায় না?
কেনো আমরা বড়ো হয়ে যাই?
কেনো আমরা আর স্কুলের পাঁচিল টপকাতে পারি না?
কেনো আর প্রতি বেলায় প্রতিবেশীদের মধ্যে খাবার বিলাতে হয় না?
আমার লাল সবুজ ছেলেবেলা,
আমার বিনেসুতোর বন্ধুরা,
আমার স্কুল পালানো আমার প্রথম প্রেমে পড়া,
আমার একসাথে টিভি দেখা,
আমার প্রতি বেলার খাবার বিলিয়ে আসা,
আমার জীবন, আমার খুশি আমার বেঁচে থাকা,,, কোথায় গেছে সে দিনগুলো, সে সময়গুলো?
কোনো ভাবে কী সেই স্কুল জীবনকে বেঁধে রাখা যেতো না?
📌Drama: Reply 1988
📌Country: South Korea (2015)
📌IMDB: 9.2/10
📌Episode: 20+2 special
📌Duration: 1 hour 30 min+
2015 সালে মুক্তিপ্রাপ্ত হায়েস্ট রেটেড কোরিয়ান ড্রামা Reply 1988 ,,আমাকে উত্তর দাও ১৯৮৮।
কীভাবে এই গল্প আমাদের জীবনের সাথে এতো মিলে যায়? এটা ড্রামা নয় এটা আমাদের তারুণ্য। এখানে বলা প্রতিটা চরিত্র আমরা, এখানে দেখানো প্রতিটা আনন্দ, প্রতিটা দুঃখ আমাদের, প্রতিটা সম্পর্ক আমাদের জীবনের প্রতিচ্ছবি।
Spoiler Alert  
📌কিছুটা গল্প, পুরোটা জীবনঃ -
সাংমুন-দং, সিউল
পাঁচটি পরিবার, যাদের ভিতরে কোনো ব্যক্তিগত ব্যাপার নেই, তারা এক, তারা গ্রামের মেঠো পথের মতো মিষ্টি, তারা সরল তারা প্রাণোচ্ছ্বল তারকার মতো।
সবচেয়ে ধনী পরিবার জুং হোয়ানদের পরিবার, বাবা-মা আর দুইভাইয়ের ছোট্ট পরিবার। তারপর চোই তেকের পরিবার। তেক বিখ্যাত গো গেম খেলোয়ার। শান্ত শিষ্ট নিরীহ ছেলে তেক।তারপর আসে দং রিওং দের পরিবার। বাবা স্কুলের ডিন, কিন্তু ছেলেকে পড়াশোনা মুখী করানো তার কাজ নয়। তারপর সুন উ দের পরিবার, বাবা মারা গিয়েছে দুই বছর আগে। ছোটো বোন জিনজু ,সে ও তার মা। এরপরে আসে আমাদের মহারানী দকসুনের পরিবার। দুই বোন ও একভাইয়ের মোট পাঁচ সদস্যের পরিবার। এই বাড়ির ই ছোটো মেয়ে প্রেমে পড়ে যায় সুন উর।
-----
📌অনেকটা প্রেমঃ-
কিশোরী বেলার প্রেম। মস্তিষ্ক জুড়ে ফ্যান্টাসি,, কোনো এক তুষার স্নাত রাতে সে শুনতে চায় তার প্রথম প্রেমের কথা,, কিন্তু তারুণ্য আমাদের শেখায় কাঁদতে। সুন উ তার বড়ো বোন বোরার প্রেমে পাগল,, হোক সিনিয়র, তবুও সে জুনিয়র হয়েও ম্যাচিউর। সেই রাতে তার কী কান্না অথচ আড়ালে হেসেছিলো জুং হোয়ান। কারণ দকসুন ছিলো জুং হোয়ানের প্রথম প্রেম। সবে আলো ফুটছে জীবনে।
শুরু হয় সাংমুনের ধোঁয়া ওঠা নোনা ধরে যাওয়া গলি জুড়ে প্রেম। রাজপথে কেউ নেই তারা দুজনে আছে। মায়েদের চৌকি পেতে গল্প চলে সকাল বিকাল, সেই চৌকিতে রাত্রিজুড়ে মিটি মিটি জ্বলে যাওয়া নক্ষত্রের সাথে প্রেম চলে বোরা সুন উর। কিন্তু দকসুন??
দকসুন সে সময় স্টাডি রুমে না পড়ে ঘুমায়। তিন বছরের বাচ্চার মতো ঘুমায়। তার ঘুমে ছাগল ডেকে ওঠে।
----
কখনো রাত দুটো বেজে যায় তার ঘুম ভাঙে না,, এদিকে একজোড়া আঁখি তখনো তার পথ পানে চেয়ে আছে‌।কখনো বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় ছাতা নিয়ে এগিয়ে এসে ওয়ার্নিং দিয়ে যায়,, রাত করে ফিরবি না। সে কে? সে প্রথম কিশোরী বেলার প্রেমিক জুং হোয়ান।
খেলতে খেলতে তেকের ক্লান্তি কায়া বেয়ে গড়িয়ে যায়। মনে হয় দকসুনের কাঁধে মাথা রাখলে একটু বোধহয় স্বস্তি ফিরতো। হ্যাঁ দকসুন সে সুযোগ দিয়েছিলো তেককে। তারা যে বন্ধু, অন্তরের বন্ধু,, সবাই সবার সবথেকে প্রিয়।
দং রিওং লাভ গুরু, জীবনের জটিল সময়ের দ্বিধা দ্বন্দ্ব গুলো যে নিমিষে কথা বলে সহজ করে দিতো। তার জীবন দারুণ উপভোগ্য।
বোরার রাগী মেজাজ,, এ যেনো আমাদের কারো কারো প্রতিচ্ছবি। পাড়ার ছেলেরা দেখলে ভয় পাবে এমন ইমেজ আমাদের কারো কারো আছে। দুই বোনের ঝগড়া মারামারি। আর ছোটো ভাইয়ের প্রতি দরদ সব মিলে সাংমুনে সুখের কমতি ছিলো না।
---
📌আমার অনুভূতিঃ-
বাবার সাথে দকসুনের সম্পর্ক -বন্ধুত্বের।
বাবার সাথে বোরার সম্পর্ক- শ্রদ্ধার।
বাবার সাথে নো উলের সম্পর্ক - আদরের।
এপিসোড ৩ --
জুং হোয়ান দকসুনের ছোট্ট চিকন সেই গলিটায় আটকে পড়া। আমার হার্টবিট বেড়ে গিয়েছিলো।
এপিসোড ২-
দকসুনের দাদীর মৃত্যুতে তার বাবা, ফুপি, বড়ো চাচ্চুর কান্না। আমি কেঁদেছি এখানে।
এপিসোড ৪-
বাড়িতে এসে ক্যামেরা হারানোর জন্য দকসুন যে মাইর খেলো। হেসেছি অনেক।
এপিসোড ৬-
সুন ঊর কাছে রিজেক্ট হওয়া। দকসুন কেঁদেছিলো, জুং হোয়ান হেসেছিলো।
এপিসোড ১৮,১৯,২০ সব কেঁদে ভাসিয়েছি, প্রতি এপিতেই মনে হয় আমি কাঁদতাম।
যখন বোরা হোস্টেলের উদ্দেশ্য বাড়ি ছাড়লো,মাঝ পথে বোরার বাবাকে দেখে কেঁদেছিলাম। মনে হচ্ছিলো আমার বাবা।
দকসুন যখন হোস্টেলে গিয়ে বোরার পড়ার রুম দেখে বোরাকে জড়িয়ে কেঁদেছিলো তখনো আমি কেঁদেছিলাম।
দকসুনের বাবা যখন রিটায়ার করলো, বাবাকে দেওয়া গিফট দেখে সেখানে লেখা প্রতিটা কথা পড়ে আমি ফুপিয়ে কেঁদেছি। বোরার বিয়ের সময় বাবাকে না বলা কথাগুলো চিঠিতে পড়ে কেঁদেছি। বোরাকে লেখা বাবার চিঠি পড়ে কেঁদেছি। দকসুনের দেওয়া বাবার জুতার ভাজে টিস্যু রাখা দেখে কেঁদেছি। মায়ের হাতে নেইল পালিশ পরিয়ে দিয়ে বাবা মায়ের সাথে সময় কাটানো দেখে কেঁদেছি।
---
স্কুল যাওয়ার পথে বাস দৃশ্যে হেসেছি। দং রিওং এর পাইলসের সিরিয়াস সমস্যা দেখে হেসেছি। নো উলের বোরা সুন ঊকে সন্দেহ করা দেখে হেসেছি। তেকের সামনে বোরা সুন উর ধরা পড়া দেখে হেসেছি। দকসুন দং রিওং এর হাতে সুন উর মার খাওয়া দেখে হেসেছি। আজুম্মাদের নাচ দেখে হাসতে হাসতে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার অবস্থা। দং রিওং আর জুং হোয়ানের মায়ের কনসার্টে অংশগ্রহণ করে ডিমের গানে নাচ দেখে হেসেছি।
জুং হোয়ানের বাবার,, আইগো সুং সাজা বলে দকসুনের দিকে হাত বাড়িয়ে দেওয়া দেখে হেসেছি। দকসুনের পেত্নী সাজ দেখে হেসেছি। চোর এসেছে বলে লাঠি ঝাড়ু নিয়ে বের হয়ে আসা সবাইকে দেখে হেসেছি।
----
📌বলেও শেষ হবে না তবুও কিছুঃ -
আমি হেসেছি, কেঁদেছি আর নস্টালজিক হয়েছি আর ভেবেছি ওরা কীভাবে বুঝলো আমাদের জীবন। এগুলো আমাদের গল্প কীভাবে জানলো? তবে কী দেশ, জাতি, গোত্র ভেদে জীবন একরকম হয়? সবাই ছেলেবেলা স্কুল পালায়, সবাই দু একবার হোঁচট খায়, সবাই ভাঙা গলায় গান গায়, দু একবার কাঁকড়া নাচ নাচে আর কখনো কখনো প্রেমে পড়ে তবে বলতে পারে না??
জীবন এমন কেনো?
দকসুন তার ৮৮ তে ফিরতে চায় যেখানে বাবা মা ছিলো পর্বতের মতো। যেখানে জীবন ছিলো লাল - সবুজ।
আর একবার কী ফেরা যায় না সেই ছোট্ট গলিটায়, যেখানে কেটেছে আমাদের তারুণ্য আমাদের সহস্র স্মৃতির মেলা যেখানে সেখানে কেনো উঠবে দালানকোঠা? আমার হাফ বেজমেন্টে কাটানো জীবনটাই ভালো ছিলো। সে জীবনটাই ভালো ছিলো যেখানে তেক বাবাকে বোঝাতে পারতো না তাকে কতো ভালোবাসে। যেখানে সুন উ জিনজুকে কোলে নিয়ে আইসক্রিম খাওয়াতে পারতো। যেখানে জুংবং বাচ্চাদের গেম খেলতো। আর দং রিওং জীবনের বানী দিতো। দকসুনের দুই বান্ধবী নিজেদের নায়িকা ভাবতো আর বোরার জটিল মেজাজ ছিলো।
---
চোখের সামনে এক অবুঝ ছেলেবেলা দেখলাম আর কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
পুরাতন ক্যাসেট প্লেয়ারে তখন গান বাজতো,খেতে বসে একসাথে টিভি দেখা আর লিজেন্ডারি সব অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়ক, গায়িকা। মাঝে মাঝে স্বপ্ন খুঁজে পেতাম না,, তাই গলি বেয়ে চলে যাওয়া সিঁড়িতে বসে বাবার কাছে জানতে চাইতাম বাবা আমার কেনো কোনো স্বপ্ন নেই?? কখনো প্রেম করতে গিয়ে মায়েদের কাছে ধরা।
---
এইতো জীবন। সে জীবন হয়েছে বাসি। জীবন ভিড়েছে নব নব গন্তব্যে। সবাই বিজি আর সেই একসাথে স্কুল যাওয়া, পাল্লা করে ভোর বেলা ওঠা অথবা একসাথে টিভি দেখা নেই, বলতে না পারা ভালোবাসা নেই। শৈশব তার রঙিন প্রজাপতি ভরে স্মৃতি নিয়ে এখন খুঁজছে নতুন শিশু। তবে তারা কী হবে এমন সহজ সুন্দর?
এই ড্রামার প্রতিটা ost,, বিশেষ করে "Youth"
Some day, it’ll leave me, this green youth
Like a flower that withers and blooms
On a moonlit night, through the window
My young love song sounds sad
I try to catch the days that go
But my empty hands get sad
So I should just let them go, I should turn away
That’s how time passes
I can forgive lovers who leave me
But not time that leaves me
My empty heart
Keeps looking for the olden days
I try to catch the days that go
But my empty hands get sad
So I should just let them go, I should turn away
That’s how time passes
এখনো অনেক বলতে ইচ্ছে করে,, আসলে এই ড্রামা নিয়ে বললে শেষ ই হবে না ঘোর কেটে গেলে মাঝে মাঝে বলবো। আমি এই ড্রামা নিয়ে বলতে আজীবন ভালোবাসবো। ❤
আশির দশকের প্রেম, একাবিংশ শতকে এসে কী আর মেলে? সে কেবলি কুয়াশা, মরীচিকা আর স্মৃতি।💛
 
 
রিভিউটি লিখেছেনঃ  তায়্যিবা তাবাসসুম
 
 
 সিরিজ ট্রেইলারঃ

 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.