Header Ads

Anondo Osru Bangla Movie Review | আনন্দ অশ্রু মুভি রিভিউ | Salman Shah | Shabnur | Kanchi | Humayun Faridi | Dildar

 

➔ সিনেমা: আনন্দ অশ্রু।
➔ জনরা: রোমান্স/ড্রামা/ট্র্যাজিডি।
➔ পরিচালক: শিবলী সাদিক।
➔ অভিনয়: সালমান শাহ্‌, শাবনূর, কাঞ্চি, হুমায়ূন ফরীদি, সাদেক বাচ্চু আরও প্রমুখ।
➔ সংগীত পরিচালক: আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল।
➔ কাহিনী: জামান আক্তার।
➔ মুক্তি: ১ আগস্ট, ১৯৯৭।
➔ দেশ: বাংলাদেশ।
➔ ভাষা: বাংলা।
➔ আই এম ডি বি রেটিং: ৮.২/১০।
আনন্দ অশ্রু= ভালো লাগার অন্য নাম কষ্ট!!!🥺🥺🥺
ভালোলাগা কি? আমার কাছে ভালোলাগা মানে বারবার সেদিকে ফিরে তাকানো, বারবার দেখা। কিন্তু ভালো লাগার অন্য নাম কষ্ট, তা আমি উপলব্ধি করেছি ❝আনন্দ অশ্রু❞ সিনেমাটি দেখার পর। এতো ভালো লেগেছে যে এই সিনেমা আমি একবারের বেশি আর দেখতে পারিনি। সিনেমার আবেগ এতো প্রবলভাবে নাড়া দিয়েছিল যে দ্বিতীয়বার সিনেমাটি দেখিনি। ভালোলাগা যে শুধুমাত্র ভালোবাসা থেকে জন্ম নেয় তা নয় ভয় এবং কষ্ট থেকেও ভালোলাগা জন্ম নেয়। ❝আনন্দ অশ্রু❞ সেই কষ্টের নাম। সালমান শাহ্ এর পাগল হয়ে থাকা, শাবনূরের ভালোবাসার কাছে যেতে চাওয়ার প্রবল আকাঙ্ক্ষা, কাঞ্চির মনের মানুষকে ভালো করে তোলার প্রয়াস সব কিছু দিয়ে সিনেমাটি এতো হৃদয়স্পর্শী ছিল যা মানুষের মনে কষ্টের দাগ রেখে দিয়েছিল।
সিনেমার নাম ❝আনন্দ অশ্রু❞ হলেও পুরো সিনেমাতে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই খুঁজে পাইনি। সালমান শাহ্ যে কত বড় মানের অভিনেতা তা আনন্দ অশ্রু যে দেখেছে শুধুমাত্র সেই বুঝতে পেরেছে। ঐ পাগলামি, তার কষ্টে বেঁচে থাকার দৃশ্যগুলো আমার যখনি মনে পড়ে চোখের কিনারাতে যেন অশ্রু জমে যায়। সিনেমা নিয়ে কি বলব, এই সিনেমার সাথে কত কিছু জড়িয়ে আছে তা বলে শেষ করা যাবে না। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের সব থেকে ক্রেজ সৃষ্টিকারী নায়ক মনে হয় সালমান শাহ্-ই। তার অধিকাংশ সিনেমা আমি দেখেছি তার মৃত্যুর পর। একজন মানুষের অভিনয়, স্টাইল কতটা ব্যতিক্রমী হলে মৃত্যুর পরও এতো বেশি জনপ্রিয় হয়ে বেঁচে থাকা যায় তার অন্যতম উদাহরণ হলেন সালমান শাহ্‌। সালমান শাহ্‌'র সেরা সিনেমার নাম যদি আমাকে বলতে বলা হয় তাহলে বলবো ❝আনন্দ অশ্রু❞, এই সিনেমার চেয়ে বেশি ভালো করা সম্ভব নয়, আর হবেও না।
সিনেমাতে কি নেই? পবিত্র ভালোবাসা, বাবার স্নেহ, পারিবারিক কলহ, লোভ-লালসা, নতুন স্বপ্নে বেঁচে থাকার আশা- সবকিছু মিলিয়ে আনন্দ অশ্রু যেন পরিপূর্ণ একটি সিনেমা। সিনেমাতে নেই কোনো দূর্দান্ত অ্যাকশন, রগরগে দৃশ্য, তবুও অনন্য মহিমায় বাংলা চলচ্চিত্রের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আলোকিত হয়ে রয়েছে ❝আনন্দ অশ্রু❞।
⚠️⚠️⚠️হালকা স্পয়লার⚠️⚠️⚠️
সিনেমার কাহিনী শুরু হয় বড়লোক বাবার গান পাগল এক ছেলেকে দিয়ে। যার জীবনে গানই সব, গানের টানে ছুটে গ্রামে চলে আসে দেওয়ান পরিবারের ছেলে। পরিচয় হয় গ্রামের দূরন্ত ষোড়শী এক মেয়ের সাথে। তার দুরন্তপনাতে মুগ্ধ হয়ে, প্রেমে জড়িয়ে পড়ে দুজন দুজনের। ধনী গরীবের ভালোবাসার যে লড়াই দেখানো হয়ে থাকে অন্যসব ভালোবাসার সিনেমাতে সেখান থেকে বেড়িয়ে এসে পুরোপুরি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয় সিনেমাটিকে। এখানেই ❝আনন্দ অশ্রু❞ সবার থেকে আলাদা। সম্পত্তির লোভে নিজের চাচার কাছে ষড়যন্ত্রের শিকার হয় খসরু। জোর করে ড্রাগ দিয়ে অসুস্থ করে রেখে ধীরে ধীরে পাগলে পরিণত করে তোলে খসরুকে। মৃত্যু হয় একটি সুন্দর ভালোবাসার। সিনেমার শেষদিকে কাঞ্চির ভালোবাসা ও শাবনূরের মনের যন্ত্রণার সমাপ্তি ঘটে মর্মান্তিকভাবে।
❝আনন্দ অশ্রু❞র নামকরণের সার্থকতা কোথায় তাহলে?
পুরো সিনেমাতে তো শুধু অশ্রু আর অশ্রু। ভালোবাসার মানুষের পাশে থেকে নির্বিচারে তাকে ভালোবেসে যাবার নামই আনন্দ, আর সেই ভালোবাসার মানুষ যখন তার নিজের কাছের মানুষটিকে চিনতে পারেনা তখনকার সেই বেদনার নামই হলো অশ্রু। একবার ভাবুন যে মানুষটিকে আপনি সব থেকে ভালবাসেন কিন্তু সে আপনাকে চিনতে পারছে না, যে মানুষটি আপনাকে এক মূহুর্ত না দেখলে ঘুমাতে পারতো না, সে আপনাকে চিনতে পারছে না, কেমন লাগবে? অশ্রুতে ভিজে উঠবে কি আঁখি? আবার একটু ভাবুন বিপদের সময় সেই মানুষটিকে আপনি সবথেকে কাছে রাখতে পারছেন, তার সেবা শুশ্রূষা করতে পারছেন, সেটা কি অনাবিল আনন্দ নয়? সেদিক থেকে ❝আনন্দ অশ্রু❞ নামকরণের মহত্ব অনেক। অনেক বেশি গভীর নামের বিশ্লেষণ।
আমার কাছে আনন্দ মানে সিনেমার গান আর অশ্রু মানে সালমান শাহ্‌ এর অভিনয়। কতটা ডেডিকেশন থাকলে এমন প্যাশনের সাথে অভিনয় করা যায়। জোর করে ড্রাগ দেওয়ার সময় সালমান শাহ্‌ এর চোখে মুখে ভয়ের অভিব্যক্তি দেখলে আপনার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠবে। ইঞ্জেকশনের সুই শরীরে ঢুকা মাত্র সালমান শাহ্-র চিৎকার আপনার কানে শূলের মত বিঁধবে। হাসপাতালের লবিতে মাথার চুল ঘসতে ঘসতে সালমানের হেঁটে বেড়ানো দেখলে আপনার নয়ন ভিজতে বাধ্য হবে। এমন অভিনয় আপনি আর দ্বিতীয়টি দেখবেন না। পর্দায় খসরু চরিত্রে অভিনয়কারী সালমান শাহ্‌ এর অভিনয় দেখে আপনি ভাববেন খসরুর কষ্ট আপনার নিজের কষ্ট। বুকের কোণে চাপা কষ্ট অনুভব করবেন। হয়তো চোখের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়তে পারে দু ফোঁটা জল। সাথে রয়েছে শাবনূরের চপলা ও মায়াময় অভিনয়। একই চরিত্রে দুরন্ত এবং শান্ত, দায়িত্ববান এক মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যায় এই সিনেমাতে। আসলে সিনেমার প্রাণ ছিলো যে সালমান আর শাবনূর তা যে মুভিটি দেখেছে সেই অনুধাবন করতে পেরেছে।
সাদেক বাচ্চু বাবার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। একজন বাবার কাছে সন্তানের সুস্থ হয়ে ওঠা যে কতটা জরুরি তিনি তারভঅভিনয় দিয়ে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। পর্দায় সবসময় যাকে দেখবেন খলনায়কের চরিত্রে অভিনয় করতে সেই তিনিই একজন মমতাময়ী বাবার চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন সুনিপুণভাবে।
খলনায়ক চরিত্র যেখানে রয়েছে হুমায়ূন ফরীদির কথা সেখানে আলাদা করে কি বলা যেতে পারে? একদিকে সালমান শাহ্‌ এর হৃদয়বিদারক অভিনয় অন্যদিকে নির্মম পাষাণ চরিত্রে ফরিদী। সম্পত্তির লোভে মানুষ কতটা নির্মম হতে পারে এই মুভির হুমায়ূন ফরিদী তার অন্যতম প্রতীক।
এছাড়াও কাঞ্চির ‘ভাবনা’ চরিত্রের উপস্থিতি ত্রিভুজ প্রেমের সংকট হিসেবে কাহিনীচিত্রের গভীরতা বাড়িয়েছে। চলচ্চিত্রের পর্দা এক জীবন্ত আখ্যানে রূপ নিয়েছে ।
আনন্দ অশ্রুর অন্যতম সেরা দিক হচ্ছে এই সিনেমার গান। ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা, হৃদয়ে সুখের দোলা” এবং “তুমি আমার এমনই একজন, যারে এক জনমে ভালোবেসে ভরবে না এ মন” গান দুটিকে কালজয়ী গান বললে ভুল বলবো না।
সর্বোপরি বলবো, আমাদের হয়তো দ্য নোটবুক, আশিকির মত সিনেমা নেই কিন্তু আমাদের ❝আনন্দ অশ্রু❞ কোনো দিক থেকেই কম নয়। ❝আনন্দ অশ্রু❞ নিজস্ব মহিমাতে উজ্জ্বল। সালমান শাহ্‌‘র অভিনয় দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে যে শিল্প সৃষ্টি করেছেন পরিচালক শিবলী সাদিক তা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যতদিন থাকবে ততদিন জ্বলতে থাকবে। মানুষদের দু-চোখ ভরে অশ্রু প্রদানের জন্য এই একটি মুভিই যথেষ্ট।
যারা এখনো দেখেননি তারা দেখে নিতে পারেন অসাধারণ এই মুভিটা। যারা দেখেছেন তাদের কাছে কেমন লেগেছে সেটা অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন।😎



রিভিউটি লিখেছেনঃ Nasim Mahmud Nirob

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.