Header Ads

Dogtooth Full Movie Review Bangla | ডগটুথ মুভি রিভিউ বাংলা | Christos Stergioglou | Michele Valley | Angeliki Papoulia

 

প্রচন্ড রকমের ডিস্টার্বিং এই মুভিটি কিভাবে অস্কারে গেল?
.
Movie: Dogtooth (2009)
Genre: Drama, Thriller
Director:Yorgos Lanthimos
IMDb: 7.2
🔴 18+ Alert 🔴
.
সবার জন্য অবশ্যই এই মুভি না। Incendis কিংবা old boy মুভির মত শুধু শেষে কোন শক দিবে তা নয় বরং শুরু থেকেই আপনাকে উইয়ার্ড জিনিসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবে। এর পেছনে যে হিডেন মিনিং লুকিয়ে রয়েছে তা জানার পর আপনি শক তো খাবেনই সেই সাথে পরিচালকের এমন কনসেপ্ট এমনভাবে প্রেজেন্ট করার কৌশল আর মুন্সিয়ানা দেখে চেয়ার থেকে পড়ে না গেলে আমি নিজে এসে আপনাকে ফেলে দিব। এই পরিচালক Lobster, Killing of a sacred dear, The favourite এর মতো মুভি উপহার দিয়েছেন। সবগুলোই মাস্টারপিস। ডগটুথ এমন ধরনের মুভি যেটাকে তুলনা করার মত অন্য কোন মুভি আমি এখন পর্যন্ত দেখিনি। স্পয়লার ছাড়া এই মুভির পারফেক্ট রিভিউ আমার পক্ষে দেয়া সম্ভব না। আমার অনুরোধ অবশ্যই স্পয়লার সহ রিভিউ পড়ে নিবেন। প্রয়োজন হলে আগে মুভি দেখে পরে রিভিউ টা অবশ্যই পড়বেন।
.
(This post may contain spoiler)
.
গল্পটা একটা পরিবারের। মা-বাবা তাদের দুই মেয়ে আর এক ছেলে। যারা জনমানব থেকে দূরে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নির্জন একটি বাড়িতে থাকে। শুধু তাই নয় তাদের চারপাশে অনেক উঁচু করে দেয়াল তুলে দেয়া যেন ভিতর থেকে বাইরে কি হচ্ছে, কি আছে কিছুই বোঝা না যায়। সন্তানদেরও বুঝানো হয় বাইরে আছে অশুভ ভয়ংকর কিছু। আর তাদের ডগটুথ অর্থাৎ মাড়ির দাঁতের সামনে অপেক্ষাকৃত একটু লম্বা দাঁত (ডগটুথ) দুটি পড়ে গেলেই তারা সেই ভয়ঙ্কর অশুভ যা কিছু আছে তার মোকাবেলা করতে পারবে। প্রতিশোধ নিতে পারবে তার বিরুদ্ধে যে বা যারা এর আগে তার ভাইকে হত্যা করেছে।
.
যেহেতু সন্তানরা কখনও বাড়ির বাইরে পা রাখেনি তাই তারা বাইরের পরিবেশের আসল সত্যতা জানতে পারেনি।আকাশে যে বিমান উড়ে তা নিচ থেকে দেখতে ছোট বলে বাস্তবেও তারা মনে করে খেলনা বিমানগুলো প্রকৃতপক্ষে আকাশ থেকে নিচে পড়ে গিয়ে তাদের হাতে এসেছে। শুধু তাই নয় হোম স্কুলিং এর সুযোগ নিয়ে মা- বাবা ছেলেমেয়েদের পুরো মগজকেই নিজেদের দখলে রাখে।এজন্য আপেলকে তারা আপেল নামে জানে না আর টেলিফোনকে বলে লবন। তাদের নিজেদের কোন নামও নেই। পরিবারের মধ্যে কেবল বাবাই বাড়ির বাইরে যেতে পারে। বাইরের কোন খাবার এমনকি পানির বোতলের প্যাকেজিং ও ভিতরে আনার সময় খুলে ফেলা হয় যেন বাইরের জগত সম্পর্কে কোন কৌতুহল ছেলে মেয়েরা রাখতে না পারে। পরিবারের এমন ওভার কন্ট্রোলিং একসময় ডিসটার্বিং পর্যায়ে যেতে থাকে।
.
মুভিটা দেখার সময় আমার ব্রুনোর কথা মনে পড়ল। পৃথিবীর সবচেয়ে সাহসী পদক্ষেপটা আমার মতে ব্রুনই নিয়েছিল। ব্রুনোর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তিনি নাকি ধর্মের বিরুদ্ধে গিয়ে শয়তানের পক্ষ নিয়ে মিথ্যা ছড়াচ্ছেন। তো কি এমন মিথ্যা বলেছিলেন তিনি জানেন? তিনি বলেছিলেন, " সূর্য নয় বরং পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে।" বলেছিলেন, " পৃথিবী ও বিশ্বজগত চিরস্থায়ী নয়, একদিন সব ধ্বংস হবে"। ব্রুনোর মত শয়তানের কথা শুনে মানুষ যেন শয়তানে পরিণত না হয় সেজন্যই নির্মমভাবে মরতে হয়েছে তাকে। কত দৃঢ়, সাহসী আর সত্যবাদী ছিলেন ভাবা যায়! তাও সেই যুগে! পরবর্তীতে গ্যালিলিও ব্রুনো আর কোপার্নিকাসের বাণী প্রচার করে ৮ বছর কারাগারে বিনা চিকিৎসায় মারা যায়।
.
ওভার প্রটেক্টিভ আর কন্ট্রোলিং পরিবারগুলো কেমন হয় এই নিয়ে এক আড্ডায় কথা বলার সময় এই মুভির আইডিয়া পরিচালকের মাথায় আসে। মুভিটাও সেটা নিয়ে। কিন্তু মুভির গভীরতায় যত ঢুকবেন ততই বিভিন্ন অর্থ সামনে আসতে থাকবে।
.
মুভি দেখার সময় মনে হয়েছে মুভিটা হয়তো আগের দিনের রাজা-বাদশাদের স্বৈরাচারী মনোভাবকে কটাক্ষ করে বানানো হয়েছে কিংবা উত্তর কোরিয়ার মত স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে। যেখানে মুভির ছেলেমেয়েগুলো হচ্ছে সাধারণ জনগণ। পরক্ষণে মনে হয়েছে সব সরকারই কৌশলে জনগণের কাছে সত্য গোপন করে সেই অর্থে সকল দেশের সকল সরকার ও জনগণ এই মেটাফোরের বাইরে নয়।
.
আবার মনে হয়েছে, ধর্মকে ব্যবহার করে মানুষ যেভাবে নিজের স্বার্থ আদায় করে সেদিকটাকে মক করা হয়েছে কিংবা পুরো ধর্মব্যবস্থার দিকে আঙ্গুল তোলা হয়েছে। যেখানে এইটা করা নিষেধ , ওইটা করা যাবে না, এইভাবে ভাবা যাবে না এইগুলো দিয়ে আমাদের চিন্তা- চেতনা, ভাবনার পথ সরু করে দেয়া হয়। কোন বিষয় নিয়ে তর্ক উঠলে মুখস্ত ধর্মের বুলি বা রেফারেন্স দিয়ে দুই ঠোঁটের মাঝে পেরেক এটে দেয়া হয়। মুখস্ত বিদ্যা আর বুলি বাদেও যে আমাদের নিজস্ব বুদ্ধি -বিবেক আছে, কোন কিছু জানার, অনুসন্ধানের আর আবিষ্কারের নেশা আছে সেই পথ প্রশস্ত হতে দেয় না।থাকে শুধু শেখানো বুলি।
.
একটা সময় মনে হয়েছে এগুলোকে একপাশে রেখে মুভিটাকে শুধুমাত্র যদি শৃঙ্খলা থেকে মুক্তির মুভি হিসেবেও দেখি তবুও তা অনন্য। এই মুক্তি হোক চিন্তার শৃংখল থেকে মুক্তি। কোন কৌতুহল বা খটকা লাগলে অনুসন্ধানের যে বাধা সেটা থেকে মুক্তি।
.
সৃষ্টি জগতে পরিবর্তন আনতে হলে একটা রেভোলিউশন এর দরকার পড়ে। ডগটুথে সেই বিপ্লবটা এখন কে ঘটাবে? উত্তরটা বরং গোপন থাক। নিজেরা দেখে নিবেন।
.
এবার আমি সামান্য একটু অপ্রাসঙ্গিক একটা বিষয় শেয়ার করছি। আমার মনে হয় জগতে আমরা অন্যের মতামত দ্বারা বেশি প্রভাবিত হচ্ছি। কোন মেয়ের আচার-আচরণকে কেউ পতিতা বললে আমাদের মগজে সেটাই সেট হয়ে যায়। ফেমিনিজম শুনলেই মনে হয় এর অনুসারীরা পথভ্রষ্ট। পুরুষ মানুষ মানেই তার চাহিদা পূরণের জন্য সঙ্গী থাকতে হবে কিংবা সঙ্গী কেবল তাদের চাহিদা পূরণের জন্যই আর সে কারণেই দেখা যায় মুভিতে মা-বাবা ছেলে সন্তানের সাথে এমন ট্রিট করে।
.
আশা করি এতক্ষনে একদম উপরে করা প্রশ্নটির উত্তর সকলে পেয়েছেন। মুভিটা দেখার পর কার কেমন ভাবনার উদয় হল তা জানতে বেশ আগ্রহবোধ করছি।


রিভিউটি লিখেছেনঃ Afsana Kornia

 

মুভি ট্রেইলারঃ


 

কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.