Header Ads

Game Of Thrones | গেম অব থ্রোনস সিরিজ রিভিউ বাংলা | Bangla Review | Emilia Clarke | Peter Dinklage | Kit Harington


 

জ্ঞানহীন বাহাদুরের থেকে তেজহীন জ্ঞানী উত্তম..!!❤
স্পয়লার এলার্ট
Game of Thrones জুড়ে উত্থান পতনের যাত্রা দেখা যায়। আর উত্থান পতনের যাত্রায় বাহাদুর আর দক্ষ ব্যক্তিত্বরা মহিমাকীর্তনের আসনে আরোহন করেছেন। কেউ হয়তো নীতি অনুসরণ করে সদয়ের মাধ্যমে সফল হয়েছেন। তবে এমনও রয়েছেন যারা প্রকাশ্যে স্নেহশীলের ঘোমটা পরিধান করে লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে সফল হয়েছেন। তবে এদের মধ্যে সব থেকে ভিন্ন হাউজ ল্যানিস্টারের টিরিয়ন ল্যানিস্টার। বাকি সবাই থেকে সে ছিলো অনন্য। অন্যতম প্রিয় চরিত্র টিরিয়ন ল্যানিস্টার নিয়ে আলোকপ করলাম।
নিয়তিঃ
প্রভাবশালী হাউজ ল্যানিস্টারের টাইউইন ল্যানিস্টারের ছোট ছেলে টিরিয়ন ল্যানিস্টার। তবে প্রভাবশালী বংশে জন্ম হলেও সে প্রাপ্য মর্যাদা কখনো পায় নি। তার শারীরিক গঠন সাধারণ মানুষের থেকে ছোট হওয়ায় সে কখনো কারো প্রসংশার পাত্র হয়ে উঠতে পারে নি। বরং সব সময় উপেক্ষা আর উপহাসের পাত্র হয়েছে। তার পিতাও তাকে কখনো বাকি দুই সন্তানের মতো তাকে আদর আর মর্যাদা দেন নি। টাইউইন ল্যানিস্টার সব সময় তাকে যেনো ঘৃণাভরা চোখেই দেখতেন। অথচ এইসবের পেছনে টিরিয়ন ল্যানিস্টারের কোনো দোষ ছিলো না। নিয়তি তাকে এমন অবস্থায় দাড় করিয়েছে।
অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে ফাঁসির কাষ্ঠে সাজা পাওয়ার অবস্থাও তৈরি হয়ে গিয়ে ছিলো। এমন এক অপরাধের সাজা তাকে দেয়া হচ্ছিলো যা তার মতে সে কখনো করে নি। তার ভেতর যন্ত্রণার মাত্রা সীমা ছেড়ে যায়। আর যখন সে সবার সামনে দাঁড়িয়ে আরোপিত অভিযোগের বদলে বলে " I Wish I Was The Monster You Think I am. I Wish I Had Enough Poison For The Whole Pack Of You" তখন সবার প্রতি তার ক্ষুব্ধ হওয়া আর হতাশা প্রকাশ পায়। সবাই কে হত্যা করতে পারলে তার চিত্ত প্রশান্ত হবে। Game of Thrones ফ্যান্টাসি ড্রামা সিরিজ হলেও অনেক বাস্তবতার দেখা যায়। যখনই কারো জীবন তছনছ হওয়ার মতো অবস্থায় থাকে তখনো কেউ না কেউ তার উপর বিশ্বাস করে। এই অসহ্যকর যন্ত্রণার মধ্যেও তার নিয়তিতে আশার আলো থাকে। আর টিরিয়ন ল্যানিস্টারের ক্ষেত্রে সেই আশার আলো ছিলো তার ভাই জ্যামি ল্যানিস্টার। সবার কাছে উপেক্ষার পাত্র হলেও তার ভাই জ্যামি তাকে সব সময় ছোট ভাইয়ের মতো যত্ন করেছে। জ্যামি সব সময় টিরিয়নের উপর বিশ্বাস রেখে বড় ভাইয়ের মতো দায়িত্ব পালন করেছে।
রাজনৈতিক দক্ষতাঃ
সম্পূর্ণ সিরিজ জুড়ে টিরিয়ন ল্যানিস্টারের মতো দক্ষ রাজনীতিবিদ আর কেউ ছিলো বলে মনে হয় নি। টিরিয়ন ল্যানিস্টার একজন আদর্শবান রাজনীতিবিদ। যারা ইতিহাস পড়েছেন সবারই কম বেশি বিভিন্ন রাজাদের নিয়ে ধারণা রয়েছে। একটি সাম্রাজ্যে রাজা সব থেকে ক্ষমতাধর ব্যক্তিত্ব। তার ইচ্ছায় সব কিছু হয়। কিন্তু যেকোনো শাসনে রাজার নিচেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব থাকেন। তারা রাজদরবারে বিশেষ প্রভাব রাখতে পারেন। ইতিহাসে এমন ব্যক্তিত্বও রয়েছেন যারা সরাসরি রাজা না হয়েও শাসন কাজ কে বিরাট ভাবে প্রভাবিত করেছেন। অনেক সময় রাজা কে নিজেও এই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের মুখাপেক্ষী হতে হয়। টিরিয়ন ল্যানিস্টার সেই প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বদের একজন। টিরিয়ন কোনো বড় সেনাপ্রধান নয়। সে কখনো নারীদের সাথে ব্যস্ত থাকে আবার কখনো মাদকের নেশায় ন্যস্ত থাকে।
কিন্তু সে তার স্বীয় রাজনৈতিক দক্ষতায় বাকি সবার উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। দক্ষতা ভরা কথাবার্তার মাধ্যমে সে যেনো মৃত্যুঝঁকি কেও হার মানায়। তাই তো তার দক্ষতায় সে "মাস্টার অব কয়েন্স" এর পদে আরোহন করে। আর রাজদরবারে তার সুনাম আর প্রতিপত্তিও বাড়তে থাকে। ডেনেরিসের বাহিনীতেও সে বিরাট প্রভাব রাখে। সে হ্যান্ড অব কুইন পদে ডেনেরিস কে রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে পরামর্শ দিয়ে থাকে। তার কূটনৈতিক দক্ষতায় ডেনেরিসের বাহিনী সর্বেসর্বা রূপে আবির্ভূত হয়। তার কূটনৈতিক তৎপরতা তাকে জন স্নো এবং সানসা স্টার্কের চোখে শত্রু থেকে ভালো মানুষে রূপান্তর করে। তার কূটনৈতিক দক্ষতায় ডেনেরিসের বাহিনী আর জন স্নো'র বাহিনীর মধ্যে সংঘাত ঘটে নি। বরং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে। ফলে হোয়াইট ওয়াকারদের সাথে যুদ্ধে তারা একজোট হয়ে লড়াই করতে সক্ষম হয়।
স্বার্থপর উত্তম জ্ঞানীঃ
পুরো সিরিজ জুড়ে জন স্নো, জেমি ল্যানিস্টার, সার্সি, ডেনেরিস, সানসার মতো চরিত্র দেখতে পাবেন। এরা কেউ নিজের দায়িত্ব পালন করছে কেউ পিতার প্রতিশোধের জন্য লড়ছে, কেউ সিংহাসনের জন্য লড়ছে। এরা অনেক সাহসী আবার তাদের দক্ষতাও রয়েছে। কিন্তু টিরিয়ন নিজের জন্য লড়ছে। সে কোনো সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য লড়ছে না। সিরিজ শুরুর দিক থেকেই সে নিজের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়ছে। সব ঘটনাক্রমে সে এসে ডেনেরিসের হ্যান্ড অব কুইন হয়। কিন্তু তার কখনো ক্ষমতার লোভ ছিলো না। আবার সে তলোয়ার বাজি তেও দক্ষ নয় কিংবা রণক্ষেত্রের বীর বাহাদুরও নয়। তার মধ্যে সেই তেজও নেই যে একাই রণক্ষেত্রে উত্তম যোদ্ধার মতো দাপট দেখাবে। কিন্তু সে এই সিরিজের সব থেকে জ্ঞানী চরিত্র। বইয়ের পাতায় পঠিত জ্ঞান আয়ত্ত করে সে নিজেও একজন জ্ঞানী রূপে আবির্ভূত হয়েছে। আর এই জ্ঞান তাকে উপহাসের পাত্র থেকে সম্মানের আসনে বসিয়ে। তার জ্ঞান কে সে কথাবার্তার মাধ্যমে উপস্থাপন করতে পারে। যা বাকিরা পারে নাই। সে সরাসরি রণক্ষেত্রে লড়াই করে নি। কিন্তু তার রণাঙ্গন বিষয়ক উপদেশ ডেনেরিসের বাহিনী'র প্রতিপত্তি বৃদ্ধি করে। আবার হোয়াইট ওয়াকারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধেও সে সরাসরি ভাবে যুদ্ধ করে নি। বরং তার রণকৌশলের পরামর্শ পরোক্ষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিলো। তার রণকৌশল ছাড়া এই লড়াইয়ে জয় করা সম্ভব ছিলো না। তাই বলেছি জ্ঞানহীন বাহাদুর থেকে তেজহীন জ্ঞানী উত্তম।
আবার তার মতো স্বার্থপর আর কোনো চরিত্র সিরিজ জুড়ে দেখতে পাওয়া যায় না। এটা কোনো খারাপ দিক নয় বরং আরো ভালো। কারণ সে সব ঝুঁকির মধ্যেও নিজেকে রেখেছে। যার জন্য কিছু ক্ষেত্রে তাকে স্বার্থপর হতে হয়। আর এর ফলে সে পরবর্তীতএ সবার ভালোর জন্য কাজ করেছে। সে সংঘাত সংঘর্ষ এড়ানোর জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করে। আর সেইজন্য সে যেকোনো সময় পক্ষপাতী কিংবা পক্ষপাতহীন পন্থা অবলম্বন করতে পারে। একজন উত্তম জ্ঞানী হিসেবে সে তার জ্ঞান কে যথাযথ ভাবে কাজে লাগিয়ে শান্তি বজায় রাখতে পারে। এরজন্য সে তার পরিবারের বিপক্ষেও অবস্থান নিতে পারে। সে তার পরিবারের বিপক্ষে গিয়ে নিজেকে জীবিত রেখে স্বার্থপর হয়েছে। আবার উত্তম জ্ঞানী হিসেবে তার জ্ঞানের মাধ্যমে প্রভাবশালী হয়েছে। তার নিজেকে জীবিত রাখার স্বার্থপরতা তার উত্তম জ্ঞানের কারণে আদর্শবান ব্যক্তিত্ব হওয়ায় বাধা প্রদান করে নি। সানসা কে জোরপূর্বক তার সাথে বিবাহ দেয়া হয়। কিন্তু সানসার সাথে ভালো ব্যবহার করে সে তার মনুষ্যত্বের প্রকাশ করেছে। যা সানসা সব সময় মনে রাখে। টিরিয়নের মনুষ্যত্ববোধ তাকে কখনো পশুর মতো করে তুলে নি। তার মনুষ্যত্ববোধ তার অন্তরে বিবেকের সঞ্চার করে। যা শেষ অব্দি দেখা যায়।
 
 
রিভিউটি লিখেছেনঃ  MahiDur Rahman Tawhid
 
 
সিরিজ ট্রেইলারঃ
 


কোন মন্তব্য নেই

Blogger দ্বারা পরিচালিত.